অষ্ট্রিয়ার ইন্সব্রুক ঐতিহাসিক শহর কেন্দ্রের এক বেলকনি – যা কিনা একটু বাইরের দিকে বেরিয়ে অনেকটা ঝুলে আছে – ছাদটা যার চকচকে সোনালি পাতে মোড়ানো – ইউরোপিয়ান সামার দুপুরের কাঁচা সোনা রোদ সেই সোনালি ছাদের উজ্জ্বলটাকে বাড়িয়ে দেয় আরও শতগুণ – সেই বেলকনির নিচের স্কোয়ারে মানুষ জমায়েত হয়, জীবনের কোলাহলে পরিপূর্ণ হয়ে ওঠে সেই সোনালি ছাদের বেলকনির নিচের স্কোয়ারটি – মানুষ মেতে ওঠে উৎসবের আনন্দে – আর উপরে সেই বেলকনিতে থাকে রাজপরিবারের লোকজন – রাজা, রানী, রাজপুত্র, রাজকন্যা – অতীতে এই ছিল এই জায়গার আসল চরিত্র।
চকচকে তামার টাইলস দিয়ে তৈরি এই সোনালি ছাদ ইন্সব্রুক শহরের এক গুরুত্বপূর্ণ প্রতীক। ষোলো শতাব্দীর তৈরি এই সোনালি ছাদ আজও সমান ভাবে উজ্জ্বলতা ছড়ায়, সেই বিল্ডিঙের গায়ে আঁকা মুরাল পেইন্টিং। সময় যেন এই ছাদের গায়ে তার ছাপ ফেলে যেতে ভুলে গেছে।
রাজা Maximilian I এর বিবাহের সময় ইন্সব্রুক শহর যখন নতুন সাজে সেজে উঠছিল, সেই সময়ে এই সোনালি ছাদের বেলকনি তৈরি হয়েছিল – যাতে রাজা ও রানী এই বেলকনি থেকে নিচের স্কোয়ারের উৎসব, অনুষ্ঠান, খেলা ইত্যাদি দেখতে পারেন, উপভোগ করতে পারেন।
তারপর, সময় গেছে বদলে, আর নেই সেই রাজা, নেই সেই রানী – শুধু সময়ের গায়ে, এই ঐতিহাসিক শহরের ছন্দে তাদের উপস্থিতির অনুরণন রয়ে গেছে। যা দেখতে আজও পৃথিবীর নানা কোণের মানুষ এই শহরের সোনালি ছাদের স্কোয়ারের কাছে এসে জমায়েত হয়। বর্তমান জীবনের স্পন্দনে ভরে ওঠে এই ঐতিহাসিক নগরী।
সুভেনিরের দোকান, রেস্টুরেন্ট, খোলা ক্যাফে ইত্যাদি নিয়ে ইস্টার ছুটির দুপুর এখানে এক জমজমাট পরিবেশ তৈরি করে, টুরিস্ট ও স্থানীয় মানুষের ভিড়ে সরগরম থাকে এই জায়গা।
আমরাও সেই সোনালি দুপুরে সোনালি ছাদের স্কোয়ারের সেই জমজমাট উৎসব মুখরিত পরিবেশের অঙ্গ হয়ে উঠি – চলমান সময়ের এক সোনালি মুহূর্তে বাঁধা পড়ে যাই।
তারপর! তারপর জীবন চলে জীবনের নিজস্ব গতিতে – সেই সময়, সেই দিন, সেই সোনালি মুহূর্ত গুলো সোনালি ফ্রেমে বাঁধা হয়ে, জীবনের পথে বহু পেছনে রয়ে যায়। কোন এক সোনালি ক্লান্ত দুপুরে হঠাৎ ই মনে সেই সোনালি ছাদের শহরের ছবি ভেসে আসে, সেই মুহূর্ত গুলোর ছবি ফিরে দেখি – ভালো লাগে।
ইন্সব্রুকের রাজপথ ধরে (Maria-Theresien Strasse, Innsbruck, Austria)